বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
‘ন্যায়বিচার ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় দর্শনের শিক্ষা জরুরি’ সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে মুলাদীর সোনামদ্দিন বন্দরে বিএনপির আলোচনা সভা মুলাদীর চর বাটামারা জমির দখল পাচ্ছে না খোরশেদা আক্তার ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের সাথে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাক্ষাৎ মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি চায় আলি আকবার পরিবারবর্গ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে : উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অর্ন্তবর্তী সরকারের অন্যতম কাজ শহীদ পরিবারকে সহায়তা ও আহতদের পরিপূর্ন চিকিৎসা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আবারো এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক যৌথ অভিযানে ভোলায় অস্ত্রসহ দুই ডাকাত আটক

৩০০ ছুঁই ছুঁই পেঁয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

প্রতিদিনই রেকর্ড গড়ছে পেঁয়াজের দর। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

সপ্তাহের বাজার বিশ্লেষণে জানা যায়, গেল সপ্তাহে তিন দফায় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে শেষ তিন দিনেই বেড়েছে ৮০-১০০ টাকা। পেঁয়াজের এমন দামে হতবাক ভোক্তাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আড়তদাররা আমদানিকারকদের দোষারোপ করছে। আর এ দিকে আমদানিকারকরা অদ্ভুত সব অজুহাত দেখিয়ে যাচ্ছে। একে-অপরের দিকে আঙ্গুল তোলার মধ্য দিয়ে গত দেড় মাস ধরে দেশের পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় আছে। আর তাদের রেষারেষিতে নিত্যপণ্যটি কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ ক্রেতাদের। এই অবস্থায় তীব্র ক্ষোভে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদেও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ার দেওয়ার আহ্বান জানান সংসদ সদস্যরা।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর যুক্তি দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রতিবেশী দেশ ভারত। এরপরই বিপাকে পড়ে দেশের পেঁয়াজ বাজার। ফলে ক্রমেই পেঁয়াজের দাম অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। সে সময় দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম ছিল প্রতি কেজি পেঁয়াজের। দফায় দফায় বেড়ে সেই পেঁয়াজ শতক পার হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশ কিছুদিন পেঁয়াজের দাম অনেকটা স্থিরই ছিল। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল প্রায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন কম। আমাদের দেশি পেঁয়াজের মৌসুম গ্রীষ্ম আর শীত। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দেশি পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় পানিতে পেঁয়াজ পঁচে গেছে। আর সরবরাহ কম থাকলে দাম তো বাড়বেই।

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক বক্তৃতায় বলেন, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এই বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টিকে আরও উসকে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।

ইতোমধ্যেই ২৫০ ছাড়িয়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম আরও বাড়তে পারে। নিত্যপণ্যটির দর নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দফায় দফায় অভিযান, বড় শিল্প গ্রুপের পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা, বিকল্প আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও দাম তো কমছেই না; উল্টো লাফিয়ে লাফিয়ে ছুঁয়েছে দুই শতকের ঘর। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এক দিনেই এ পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। বাজারভেদে কোনো কোনো জায়গায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা করেও।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটা বাজার ঘুরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকার বেশি দেখা গেছে। অসহায় ক্রেতারা চড়া দামেই পেঁয়াজ কিনে ঘরে ফিরছেন। তবে তা চাহিদার তুলনায় যৎসামান্যই।

এ দিকে, প্রতিটি খুচরা দোকানে মূল্যতালিকা দৃশ্যমান করার কথা থাকলেও অনেকেই তা করছেন না বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের।

কাওরান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা তানভীর হোসেন বলেন, পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যের মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখার কথা থাকলেও তা করছেন না অধিকাংশ দোকানিরা। আড়ত থেকে যে দামে কিনে আনছেন তারা, তার থেকে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

এমন অভিযোগের সত্যতা জানালেন খোদ ভোক্তা অধিকারের সহকারি পরিচালক জব্বার মন্ডল। তিনি শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দিনব্যাপী রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে আড়ত থেকে কেনা পেঁয়াজের দর সম্বলিত ক্যাশ মেমো দেখাতে না পারা ও মূল্য তালিকা দৃশ্যমান না থাকায় ৫ খুচরা ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন অংকের নগদ অর্থ জরিমানা করেন।

জব্বার মন্ডল বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত ভোক্তা অধিকারের বিশেষ এই মোবাইল টিম নিয়মিত বাজার তদারকি করে অভিযান চালাচ্ছে। তাই নিয়মিত বাজার তদারকির অংশ হিসেবে আমরা মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারে বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালাই। ব্যবসায়ীরা মুখে ১৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কেনার কথা বললেও তারা আড়তের ক্যাশ মেমো দেখাতে না পারা এবং মূল্যতালিকা দৃশ্যমান না থাকায় পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড করেছি।

তিনি বলেন, আমরা খুচরা বাজার ছাড়াও মূল আড়ত শ্যামবাজার, কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়িতেও অভিযান চালিয়েছি। আমাদের অভিযান প্রতিদিনই দেশব্যাপী চলছে।

আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা খুচরা ও পাইকারি বাজারে ক্লোজ মনিটরিং করছি যেন ভোক্তারা সাশ্রয়ী দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে।

আবার ক্রেতাদের আরও অভিযোগ, সকালে এক দাম আর বিকালে আরেক দাম। দামের সঙ্গে সকাল-বিকালের ফারাক যেন আকাশ-পাতাল!

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো পেঁয়াজের এমন উচ্চমূল্য দেখেনি মানুষ। সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ সংসদে দেওয়া বক্তব্যে পেঁয়াজের দর নিয়ে বলেছেন, পেঁয়াজের এমন দাম কোনোদিন কল্পনাও করেননি তিনি।

গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়ায়নি। নিকট অতীতে দুই বছর আগে ২০১৭ সালে একবার পেঁয়াজের দাম ১৫০ হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ফলে বাজারে সরবরাহ কম। আর নিত্য চাহিদার তালিকার এ পণ্যটি খুচরা বাজারে অন্য সময়ের চেয়ে কিছু কম হলেও খুব বেশি ঘাটতি নেয়।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকার সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিশর থেকে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। বনশ্রীতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে।

কাওরান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজার, মিরপুর ১ নম্বর বাজারসহ রাজধানীর অধিকাংশ বাজারের দৃশ্য একই।

এ দিকে, ভোগ্যপণ্যের দেশের প্রধান বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা করে। বন্দরনগরীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা দোকানে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। আর নগরের বাইরের এলাকার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ টাকায় পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। খাতুনগঞ্জের কোনো আড়তে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ভারতের কোনো পেঁয়াজ দেখা যায়নি। তবে মিয়ানমারের ভালোমানের পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং মাঝারি মানের ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্য দিকে মিসর, চীন ও পাকিস্তান থেকে সদ্য আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com